ধারণা
একতরফা দাখিলা পদ্ধতির ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Single Entry Bookkeeping । হিসাব বিজ্ঞান ব্যবসায়িক লেনদেনগুলোকে সুশৃঙ্খল ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে দ্বৈতস্বত্তার ভিত্তিতে হিসাবভুক্ত করে থাকে, যাকে দু’তরফা পদ্ধতি বলা হয়। দু’তরফা পদ্ধতি সার্বজনিন স্বীকৃত ও ব্যবহৃত হলেও এটি একটি জটিল পদ্ধতি । তাই এসব জটিল নিয়ম-কানুন অনুসরণ না করে পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুযায়ী সহজ নিয়মে লেনদেনগুলোকে হিসাবভুক্ত করার পদ্ধতিই হলো একতরফা দাখিলা পদ্ধতি । দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি ব্যতিত সকল পদ্ধতিই একতরফা দাখিলা পদ্ধতি বলে বিবেচিত। এটি একটি অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি হলেও নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে বিশেষ করে ছোট ব্যবসা ও ব্যক্তির জন্য এটি খুবই কার্রকরী। এই পোষ্টে আমরা একতরফা দাখিলা পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো এবং এর বৈশিষ্ট , সুবিধা , অসুবিধা ও উপোযোগিতা নিয়ে আলোচনা করবো।
একতরফা দাখিলা পদ্ধতি কি, কাকে বলে?
যে হিসাব পদ্ধতিতে দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতির নীতিমালা সঠিক ও সম্পূর্ণভাবে অনুসরণ করা হয় না তাকে একতরফা দাখিলা পদ্ধতি বলে। একতরফা দাখিলা পদ্ধতি একটি ত্রুতিপূর্ণ , অসম্পূর্ণ ও অবৈজ্ঞানিক হিসাব ব্যবস্থা যেখানে একতরফা দাখিলা ,দুতরফা দাখিলা এবং বেদাখিলা পদ্ধতি একই সাথে অথবা আলাদা ভাবে অনুসরণ করা হয়। একতরফা দাখিলা পদ্ধতির কোন বিশেষ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নেই । এর রুপ ভিন্ন ভিন্ন ব্যবসায়ের জন্য ভিন্নতর। এই পদ্ধতিতে কোন কোন লেনদেনের দুটি পক্ষ আবার কোন কোন লেনদেনের একটি পক্ষ হিসাবের বইতে লিপিবদ্ধ করা হয়। কিছু কিছু লেনদেনের ক্ষেত্রে কোন পক্ষই হিসাবভুক্ত করা হয় না। তাই বিশ্ব বিখ্যাত পন্ডিত উইলিয়াম পিকলস বলেন ,
The single entry system is nothing but an admixture of single entry, double entry and no entry. ( একতরফা দাখিলা পদ্ধতিটি একতরফা, দুতরফা ও বেদাখিলা পদ্ধতির সংমিশ্রণ ছাড়া কিছুই না)
এই হিসাব ব্যবস্থায় ব্যক্তিবাচক হিসাব ও নগদান হিসাব হিসাবভুক্ত করা হয় কিন্তু নামিক হিসাব ও সম্পত্তিবাচক হিসাব হিসাবভুক্ত করা হয় না ।
ব্যক্তিবাচক , নামিক, সম্পতি হিসাব কোনগুলো তা জানতে এখানে দেখুন।
একতরফা দাখিলা পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য
একতরফা দাখিলা পদ্ধতির নির্দিষ্ট কোন নীতিমলিা না থাকলেও নিম্নক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো বিদ্যমান।
১. অসম্পূর্ণ ও অবৈজ্ঞানিক : এটি একটি অসম্পুর্ণ পদ্ধতি যা কোন প্রতিষ্ঠানের পরিপূর্ণ হিসাবরক্ষনে অক্ষম। এটির কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
২. সরলতা : এটি একটি সহজ-সরল পদ্ধতি যা বাস্তবায়ন করা সহজ। এই পদ্ধতিতে হিসাবরক্ষনে হিসাবশাস্ত্রের উপর গভির জ্ঞান অর্জন করতে হয় না।
৩.সীমিত পরিসর: একতরফা দাখিলা পদ্ধতি ব্যবহার সীমিত । দুতরফা দাখিলা পদ্ধতির মতো এটি সার্বজনিন ব্যবহারে অনুপযোগী।
৪. নীতিমালাহীন : এই পদ্ধতির কোন নিদিষ্ট নীতিমালা নেই। ব্যক্তিভেদে বিভিন্ন পন্থায় হিসাব সংরক্ষন করা হয়।
৫. মিশ্র হিসাব ব্যবস্থা: এটি একটি মিশ্র হিসাব ব্যবস্থা যেখানে একতরফা , দুতরফা ও বেদাখিলা পদ্ধতি একই সাথে অথবা আলাদাভাবে ব্যবহৃত হয়।
৬.নির্ভুলতার অভাব: এই পদ্ধতিটি অসম্পূর্ণ হওয়াতে হিসাব গড়মিল দেখা যেতে পারে।
একতরফা দাখিলা পদ্ধতির সুবিধা
একতরফা দাখিলা পদ্ধতির অনেক অনেক সিমাবদ্ধতা স্বত্ত্বেও নিম্নক্ত সুবিধাসমূহ বিদ্যমান।
১.ব্যবহারে সহজতা: কোন ধরনের প্রাতিষ্ঠানি শিক্ষা বা প্রশিক্ষন ছাড়াই এই পদ্ধতিতে হিসাব সংরক্ষন করা যায়। এটি যে কেউ ব্যবহার করে নিজের হিসাব সংরক্ষন করতে পারে।
২. খরচ সাশ্রয়ী: যেহেতু এটি একটি সরল প্রক্রিয়া তাই এই পদ্ধতি ব্যবহারে আলাদা কোন অ্যাপলিকেশন বা পেশাদার ব্যক্তির প্রয়োজন হয় না তাই প্রতিষ্ঠানের খরচ কমে।
৩. সময় সাশ্রয়ী: এই পদ্ধতিতে হিসাবরক্ষনে দু-তরফা দাখিলা পদ্ধতির তুলনায় কম সময় প্রয়োজন হয় ফলে সময় কম অপচয় হয়।
একতরফা দাখিলা পদ্ধতির অসুবিধা
একতরফা দাখিলা পদ্ধতি একটি অসম্পূর্ণ ও অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি তাই এর অনেক অসুবিধা রয়েছে। নিচে অসুবিধাগুলো আলোচনা করা হলো।
১. অপূর্ণ হিসাব: এই পদ্ধতিতে প্রতিস্থানের পরিপূর্ণ আর্থিক চিত্র প্রকাশ পায় না। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ হিসাবকে উপেক্ষা করা হয়।
২.নির্ভুলতার অভাব: যেহেতু এই পদ্ধতি নিদিষ্ট কোন নীতি অনুসরণ করে না তাই হিসাবে নানা রকমের ভুল পরিলক্ষিত হয়।
৩. সীমিত আর্থিক বিশ্লেষণ: এই পদ্ধতিতে সকল আর্থিক বিবরণি পরিপূর্ণভাবে প্রস্তুত করা হয় না বিধায় সম্পর্ণ আর্থিক বিশ্লেষণ হয় না।
৪. চুরি-জালিয়াতি: এই পদ্ধতিতে চুরি জালিয়াতি সনাক্ত করা সম্ভব না তাই হিসাবে ব্যাপক গড়মিল করা সম্ভব।
৫.বড় ব্যবসায়ের অনুপযুক্ত: এই পদ্ধতি বড় ব্যবসায়ে প্রয়োগের উপযুক্ত না।
৬. কর নির্ধারনে অসুবিধা: এই পদ্ধতিতে আয়-ব্যয় , দায়সমূহের পূনাঙ্গ হিসাব রাখা হয় না তাই সঠিক কর নির্ধারন কষ্টকর।
একতরফা দাখিলা পদ্ধতির প্রয়োগ ক্ষেত্র
এটি একটি অসম্পূর্ণ পদ্ধতি ও সার্বজনিন ব্যবহারযোগ্য না হলেও নিদিষ্ট স্থানে এটি ব্যবহরার করা যায়। এমনকি স্থানভেদে এটি সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি বলেও বিবেচিত হয়।
১. ছোট ব্যবসা: লেনদেন সীমিত এমন ছোট ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জন্য একতরফা দাখিলা পদ্ধতি যথাপযুক্ত।
২. ফ্রিল্যান্সার ও একক মালিক : যে সকল ব্যাক্তি ফ্রিল্যান্সিং এর সাথে জরিত অথবা একক ব্যবসায়ে জড়িত তাদের আর্থিক কাঠামো সরল হয় তাই তারা এই পদ্ধতিতে হিসাব সংরক্ষন করতে পারে।
৩. ব্যক্তিগত বা পারিবাকি হিসাব: ব্যক্তিগত আর্থিক ব্যবস্থাপনা যেমন: পারিবারিক বাজেট , ব্যক্তিগত সঞ্চয় , ব্যয় ট্রাকিংয়ে একতরফা দাখিলা পদ্ধতি একটি সহজ উপায় হতে পারে।
উপসংহার
একতরফা দাখিলা পদ্ধতির অনেক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও ব্যক্তিগত হিসাব , ছোট ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে এটি ব্যবহার উপযোগী । এর সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো এর নির্ভুলতা ও অস্পূর্ণতা । নির্ভুল ও পরিপূর্ণ হিসাব সংরক্ষ করার জন্য আমাদের অবশ্যই হিসাববিজ্ঞানের বৈজ্ঞানিক ও পরিপূর্ণ পদ্ধতি দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে।
দু’তরফা পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখনে ক্লিক করুন।
Try yourself
একতরফা দাখিলা পদ্ধতির কোন অসুবিধাটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ?
Share with your friends and family
-
Facebook
-
Twitter
-
Linkedin
-
Whatsapp