দুতরফা দাখিলা পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও অসুবিধা
দুতরফা দাখিলা পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও অসুবিধা

দুতরফা দাখিলা পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও অসুবিধা

সুচনা ( Introduction )

১৮৯৪ সালে লুকা ডি  প্যাসিওলি নামক ইতালীয় একজন ধর্মযাজক ও গণিত শাস্ত্রবিদ পাতিগণিত, জ্যামিতি ও অনুপাতের উপর “ সুম্মা  ডি এরিথমেটিকা জিওমেট্রিকা প্রপোরশনিয়েট প্রপোরশনালিট” ( Sunma De Arithmetic Geometrica Proportionate Proportionalita) নামক পুস্তক রচনো করেন। এই পুস্তকেই তিনি প্রথম দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি সম্পর্কে আলোকপাত করেন। সেই থেকে ১৮৯৪ সাল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত হিবাব বিজ্ঞানের একমাত্র বিজ্ঞানসম্মত ও নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি হলো দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি। আজকে আমরা দুতরফা দাখিলা পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য / উপদানসমূহ / মূলনীতি, সুবিধাসমূহ/ উদ্দেশ্য ও অসুবিধাসমূহ/ সীমাবদ্ধতা নিয়ে আলোচনা করবো।

দুতরফা দাখিলা পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য / উপদানসমূহ / মূলনীতি ( Features/ Elements of Double Entry system)

দুতরফা দাখিলা পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য / উপদানসমূহ / মূলনীতি কয়টি ও কি কি?

দুতরফা দাখিলা পদ্ধতির কতগুলো মূলনীতি বা বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা এই পদ্ধতিকে অন্য সকল পদ্ধতি হতে আলাদা এবং গ্রহনযোগ্য করে তুলেছে। নিচে সগুলো আলেচনা করা হলো:-

        ১.দ্বৈতসত্তা: এই পদ্ধতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো প্রতিটি লেনদেনের অবশ্যই দুটি পক্ষ থাকবে। যার একটি ডেবিট এবং অপরটি ক্রেডিট।

        ২.পূর্ণাঙ্গ হিসাব ব্যবস্থা: দুতরফা দাখিলা পদ্ধতিই একমাত্র বিজ্ঞানসম্মত , পরিপূর্ণ ও নির্ভযোগ্য পদ্ধতি । এই পদ্ধতিতে হিসাব চক্রের সকল ধাপ অনুসরন করা হয়।

        ৩.বিজ্ঞানসম্মত: এই পদ্ধতিতে হিসাবরক্ষনের সকল বৈজ্ঞানিক সূত্র  সঠিক ভাবে প্রয়োগ করা হয়।বৈজ্ঞানিক নিয়মনীতি অনুসরণ করা হয়।

       ৪.ফলাফল সমান: এই পদ্ধতিতে মোট ডেবিট টাকার মোট ক্রেডিট টাকার সমান হয় । ফলে সামগ্রিক ফলাফল সমান হয় ।

      ৫.দাতা-গ্রহীতা: প্রতিটি লেনদেনে দুটি পক্ষ থাকে । যার এক পক্ষ দাতা যে ‍সুবিধা  প্রদান করে এবং অপর পক্ষ গ্রহীতা যে সুবিধা গ্রহণ করে।

       ৬.অর্থনৈতিক অবস্থার বিশ্লেষণ: দুতরফা দাখিলা  পদ্ধতিতে বিজ্ঞান অনুসরণ করা হয় তাই এই পদ্ধতিতে হিসাবরক্ষন করলে ব্যবসায়ের সঠিক আয়-ব্যয়  বিবরণী ও উদ্বৃত্ত পত্র প্রস্তুত করে সঠিক আর্থিক অবস্থা বিশ্লেষণ করা যায়।

        ৭.নির্ভুল হিসাবব্যবস্থা: এ পদ্ধতিতে রক্ষিত হিসাব থেকে রেওয়ামিল প্রস্তুত করে হিসাবের  গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই করা যায়।

       ৮.ডেবিট-ক্রেডিট: এ পদ্ধতিতে লেনদেনের দুটি পক্ষ থাকে যার একটি ডেবিট অন্যটি ক্রেডিট। এখানে সুবিধা  গ্রহণকারী ডেবিট এবং সুবিধা প্রদাণকারী ক্রেডিট হয়।

        ৯.পৃথক সত্তা: এ পদ্ধতিতে মালিক এবং ব্যবসায়কে আলাদা স্বত্তা  বলে বিবেচনা করা হয়।

       ১০.তুলনামুলক বিশ্লেষণ: দুতরফা দাখিলা পদ্ধতিতে সংরক্ষিত হিসাবকে অতিতের সংরক্ষিত হিসাবে সাথে তুলনা করা যায় , যা ভবিষৎ নীতি প্রণয়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়।

      ১১.আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা: দুতরফা দাখিল পদ্ধতি আন্তর্জাতিকভাবে সার্বজনিন স্বীকৃত , তাই এই পদ্ধতিতে হিসাব সংরক্ষন করলে সেই হিসাব আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা পায়।

প্রশ্ন: দুতরফা দাখিলা পদ্ধতির কোন বৈশিষ্ট্যটি নিশ্চিত করে যে প্রতিটি লেনদেনের দুটি পক্ষ থাকবে?

দুতরফা দাখিলা পদ্ধতির সুবিধাসমূহ/ উদ্দেশ্য ( Objectives/ Advantages of Double Entry System)

দুতরফা দাখিলা পদ্ধতির সুবিধা/ উদ্দেশ্য কয়টি ও কি কি?

দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি একটি পূর্ণাঙ্গ ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি যার মাধ্যমে ছোট-বড় সকল প্রকার প্রতিষ্ঠানেরহিসাব পরিপূর্ণভাবে সংরক্ষন করা যায়। এবং সংরক্ষিত হিসাব বিশ্লেষণের মাধ্যমে ভবিষৎ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়।নিচে দুতরফা দাখিলা পদ্ধতির সুবিধা/ উদ্দেশ্য আলোচনা করা হলো:

        ১.পরিপূর্ণ হিসাব রাখা: এ পদ্ধতিতে হিসাব চক্রের সবগুলো ধাপ বৈজ্ঞানিক উপায়ে সম্পন্ন করা হয় ফলে কোন লেনদেন হিসাব থেকে বাদ পরে না ।যেকোন লেনদেনের পূর্ণাঙ্গ হিসাব সংরক্ষন করা হয়।

        ২.তথ্যের পর্যাপ্ততা: এ পদ্ধতিতে হিসাবরক্ষন করা হলে ব্যবসায়ের সকল  প্রয়োজনীয় সকল তথ্য পাওয়া যায় ।হিসাব তথ্যের ব্যবহারকারী যেমন: মালিকপক্ষ, ঋণদাতা, সরকার চাইলে যেকোন প্রকার তথ্য নিতে পারে।

        ৩. ভুলত্রুটি নির্ণয় ও সমাধান: লেনদেনরে দুই পক্ষ হিসাবভুক্ত করা হয় বিধায় এই পদ্ধতির হিসাবসমূহকে রেওয়ামিলের মাধ্যমে শুদ্ধতা যাচাই করা যায়। কোন ত্রুটি পাওয়া গেলে তা সামধানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।

       ৪.চুরি- জালিয়াতি রোধ : এই পদ্ধতিতে হিসাবরক্ষন করা হলে সেখানে চুরি-জালিয়াতি সহজেই সনাক্ত করা যায় এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।

        ৫.প্রকৃত লাভ-লোকসান নির্ণয়: এ পদ্ধতিতে আয়-ব্যয় সম্পর্কিত সকল লেনদেন সঠিকভাবে হিসাব ভুক্ত করা হয় তাই নির্দিষ্ট হিসাবকাল শেষে আয় বিবরণী প্রস্তুত করে প্রকৃত লাভ-লোকসানের পরিমান জানা যায়।

        ৬. প্রকৃত আর্থিক অবস্থাা নির্ণয়: এ পদ্ধতিতে সকল সম্পদ,  দায় ও মালিকাসাস্বত্ত্ব সম্পর্কিত লেনদেন সঠিকভাবে হিসাবভুক্ত করা হয় ফলে নির্দিষ্ট হিসাবকাল শেষে উদ্বৃত্তপত্র তৈরী করে প্রতিষ্ঠানের সঠিক আর্থিক অবস্থা জানা যায়।

        ৭.তুলনামুলক বিশ্লেষণ ও পরিকল্পনা গ্রহণ: এ পদ্ধতিতে হিসাবরক্ষনের ফলে সঠিক আয়বিরণী ও আর্থিক বিবরণী পাওয়া যায় ।  এই সঠিক বিবরণীগুলো পূর্ববর্তী বছরের বিবরণীর সাথে তুলনামূলক বিশ্লেষণ  করে ভবিষৎ পরিকল্পনা গ্রহণ করা যায়।

       ৮.আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা: দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি আন্তর্জাতিকভাবে সার্বজনিন স্বীকৃত , তাই এই পদ্ধতিতে হিসাব সংরক্ষন করলে সেই হিসাব আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা পায়।

        ৯. কর নির্ধারণে সহায়তা: নির্ভযোগ্য পদ্ধতিতে সকল হিসাব সম্পন্ন করা হয় বিধায় এটি সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট গ্রহণযোগ্য। তাই এই পদ্ধতিতে কর নির্ধারণ  বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হয়  না।

        ১০. ব্যয় নিয়ন্ত্রণ: এ পদ্ধতিতে হিসাবনক্ষনের সময় সকল প্রকার ব্যয় আলাদাভাবে সনাক্ত করা যায় ফলে অপ্রয়োজনীয় ও অতিরিক্ত ব্যয় কমিয়ে ব্যয় নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

প্রশ্ন: নিচের কোন পদ্ধতিটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ?

দুতরফা দাখিলা পদ্ধতির অসুবিধাসমূহ/ সীমাবদ্ধতা ( Limitations/ Disadvantages of Double Entry System)

দুতরফা দাখিলা পদ্ধতির অসুবিধাসমূহ/ সীমাবদ্ধতা কি কি?

এতো এতো সুবিধার অসুবিধার মধ্যেও দুতরফা দাখিলা পদ্ধতির কিছু অসুবিধা বা সীমাবদ্ধতাও রয়েছে । যেমন: এটি জটিল , সময় সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল পদ্ধতি যা সম্পাদনা করতে বিশেষ জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তির প্রয়োজন। নিচে দুতরফা দাখিলা পদ্ধতির অসুবিধাসমূহ/ সীমাবদ্ধতা  অলোচনা করা হলো:

        ১. জটিল পদ্ধতি: দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি একটি জটিল পদ্ধতি । এই পদ্ধতিতে হিসাবরক্ষনে হিসাব শাত্রের গভীর জ্ঞান প্রয়োজন।

        ২.সময় সাপেক্ষ: জটিল পদ্ধতি হওয়ায় এই পদ্ধতিতে হিসাব সংরক্ষনে তুলনামূলক বেশী সময়ের প্রয়োজন।

       ৩.ব্যয়বহুল: দুতরফা দাখিলা পদ্ধতিতে হিসাবরক্ষনে বিশেষ অ্যাপ্লিকেশন ও বিশেষ জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি দরকার যা অত্যান্ত ব্যয়বহুল।

       ৪.ব্যক্তিগত ও ক্ষুদ্র হিসাবে অনুপযোগী: যদিও এটি সার্বজনিন স্বীকৃত পদ্ধতি কিন্তু এটি একটি ব্যয়বহুল , সময় সাপেক্ষ পদ্ধতি হওয়ায় ছোট প্রতিষ্ঠান বা ব্যকিগত হিসাবে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা অনুচিত।

        ৫. ব্যয়বহুল অ্যাপ্লিকেশন: আধুনিক হিসাববিজ্ঞান কম্পিউটার নির্ভর । যা পরিচালনা করতে বিশেষ সফ্টওয়ার বা অ্যাপ্লিকেশনস দরকার যা ব্যবহুল।

প্রশ্ন: দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি একটি-----

MCQ Test

দুতরফা দাখিলা পদ্ধতির মূল বৈশিষ্ট্য কী?

দুতরফা দাখিলা পদ্ধতির মাধ্যমে ব্যবসায়ের কোন সুবিধা পাওয়া যায়?

দুতরফা দাখিলা পদ্ধতির কোন অসুবিধা হতে পারে?

দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি কোন ধরনের ব্যবসায় ব্যবহার করা যেতে পারে?

দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি ব্যবহারের জন্য কোন দক্ষতার প্রয়োজন?

Leave a Reply