দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি
দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি

দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি কি? কাকে বলে? ডেবিট ক্রেডিট নির্ণয়ের নিয়ম

দুতরফা দখিলার পদ্ধতির ধারণা

দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি কি?

     দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি বা Double Entry System হলো একমাত্র সুশৃঙ্খল ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি। এই পদ্ধতির মূলকথা হলো প্রতিটি লেনদেনের দুটি পক্ষ থাকবে , যার একটি ডেবিট এবং অন্যটি ক্রেডিট। যেহেতু এই পদ্ধতিতে প্রতিটি লেনদেনকে সমান অর্থ দ্বারা ডেবিট এবং ক্রেডিট করা হয় , সেহেতু হিসাবে দুই দিক সর্বদা সমান থাকে এবং হিসাব  স্বয়ংক্রিয়ভাবে মিলে যায় । যার ফলে ভুলের সম্ভাবনা থাকে না কারন ভুল হলে দুই দিক মিলবে না। তাই দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি সম্পূর্ণরূপে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি। এই দুতরফা দাখিলা পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করেই  হিসাব সমীকরণ A=L+OE ( সম্পদ= দায় + মালিকানাস্বত্ত্ব ) সৃষ্টি হয়েছে। 

দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি কাকে বলে?

     যে পদ্ধতিতে প্রতিটি লেনদেনের দ্বৈতস্বত্তা বিশ্লেষণের মাধ্যমে এক পক্ষ ডেবিট এবং সমান অপর একটি পক্ষ ক্রেডিট করে হিসাবে বইসমূহে লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি বলে ।

 Prof. Brook Palmer, Archeএর মতে , “ Double Entry System is a process of recording both effects of  a given transaction in order to present complete picture.” অথ্যাৎ- প্রতিটি লেনদেনের দ্বৈত স্বত্তা লিপিবদ্ধ করে ব্যবসয়ের প্রকৃত আর্থিক অবস্থা তুলে ধরার প্রকৃয়াই হলো দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে  দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি সম্পর্কে বলা যায়-

  • এটি দ্বৈতসত্তা নীতিি
  • এর মাধ্যমে গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই করা যায়
  • এটি একটি পূণাঙ্গ ও বৈজ্ঞানিক হিসাব ব্যবস্থা
  • এ পদ্ধতির কারণে উদ্বর্তপত্র বা আথিক অবস্থার বিবরণী মিলে যায়

উৎপত্তি:

১৮৯৪ সালে লুকা ডি  প্যাসিওলি নামক ইতালীয় একজন ধর্মযাজক ও গণিত শাস্ত্রবিদ পাতিগণিত, জ্যামিতি ও অনুপাতের উপর “ সুম্মা এরিথমেটিকা জিওমেট্রিকা প্রপোরশনিয়েট প্রপোরশনালিট” ( Sunma De Arithmetic Geometrica Proportionate Proportionalita) নামক পুস্তক রচনো করেন। এই পুস্তকেই তিনি প্রথম দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি সম্পর্কে আলোকপাত করেন । তার এই পদ্ধতির  উপর ভিত্তি করেই আধুনিক হিসাব বিজ্ঞানের উৎপত্তি তাই লুকা ডি প্যাসিওলিকে হিসাব বিজ্ঞানের জনক বলা হয়।

আরো দেখুন:-

ডেবিট ক্রেডিট নির্ণয়ের নিয়ম

      দুতরফা দাখিলার মাধ্যমেই হিসাবের ডেবিট ক্রেডিট নির্ণয় করা হয়। ডেবিট ক্রেডিট নির্ণয়ের দুটি পদ্ধতি রয়েছে।

১. সনাতন বা হিসাব ভিত্তিক নিয়ম

২. আধুনিক বা সমীকরণভিত্তিক নিয়ম

আমরা প্রথমে আধুনিক পদ্ধতিতে ডেবিট ক্রেডিট নির্ণয় শিখবো তারপর আরো জ্ঞান অর্জনের জন্য সনাতন পদ্ধতিও দেখে নিবো।

আধুনিক পদ্ধতিতে ডেবিট ক্রেডিট নির্ণয়ের নিয়ম

আধুনিক পদ্ধতিতে ডেবিট ক্রেডিট উদাহরণ :-

আমরা জানি, আধুনিক পদ্ধতিতে হিসাব ৫ প্রকার ।  সম্পদ , দায় , আয় , ব্যয় ও মালিকানাস্বত্ত্ব । আর এই ৫ প্রকার হিসাবের উপর ভিত্তি করে ডেবিট ক্রেডিট নির্ণয় করা যায় যাকে আমরা আধুনিক পদ্ধতিতে ডেবিট-ক্রেডিট নির্ণয় পদ্ধতি বলতে পারি।

মূল বিষয়:-

১. সম্পদ, ব্যয় — ডেবিট

২. দায়, আয় , মালিকানাস্বত্ত্ব— ক্রেডিট

অর্থ্যাৎ- সম্পদ ও ব্যয় বাড়লে ডেবিট হয় এবং কমলে ক্রেডিট হয় । আবার দায়. আয় ও মালিকানাস্বত্ত্ব বাড়লে ক্রেডিট এবং কমলে ডেবিট হয়।

মালিকানাস্বত্ত্বের হ্রাস-বৃদ্ধি:-

     আমরা জানি , মালিকানাস্বত্ত্ব=মূলধন + আয় – ব্যয় – উত্তোলন। এখানে মূলধন ও আয়ের আগে (+) ‍চিহ্ন রয়েছে তাই মূলধন ও আয়ের সাথে মালিকানাস্বত্ত্বের সম্পর্ক সমমূখী অপরদিকে ব্যয় ও উত্তোলনের আগে (-) চিহ্ন তাই ব্যয় ও উত্তোলনের সাথে মালিকানাস্বত্ত্বের সম্পর্ক বিপরীতমূখী। অর্থ্যাৎ-

মূলধন ও আয় বাড়লে মালিকানাস্বত্ত্ব বাড়ে এবং মূলধন ও আয় কমলে মালিকানাস্বত্ত্ব কমে।

ব্যয় ও উত্তোলন বাড়লে মালিকানাস্বত্ত্ব কমে এবং ব্যয় ও উত্তোলন কমলে মালিকানাস্বত্ত্ব বাড়ে।

Point to be noted:  মালিকানাস্বত্ব হিসাব বলতে  এখানে দুটি হিসাবকে বিবেচনা করা হয়। মুলধন হিসাব ও উত্তোলন হিসাব । মুলধন বাড়লে মালিকানাস্বত্ব বাড়ে অপরদিকে উত্তােলন বাড়লে  মালিকানাস্বত্ত্ব কমে।  

একটি উদাহরণের মাধ্যমে ব্যাপারটা পরিষ্কার করা যাক। মনে করি নগদে পণ্য ক্রয় ৫০০০ টাকা। এই লেনদেন দুটি পক্ষ বা হিসাব  বের করার চেষ্টা করি। এখনে ৫০০০ টাকা প্রদান করা হয়েছে  ফলে নগদ টাকা কমেছে , নগদান হিসাব একটি সম্পদ অর্থ্যাৎ সম্পদ কমেছে । আমরা জানি সম্পদ কমলে ক্রেডিট হয় তাই এখানে নগদান হিসাব ক্রেডিট হবে। অপরদিকে নগদ টাকার বিনিময়ে আমরা কি করেছি? ক্রয় করেছি তাই অপর হিসাবটি হবে ক্রয় হিসাব। আর ক্রয় হলো ব্যয় হিসাব। এখানে ব্যয় বেড়েছে । আমরা জানি ব্যয় বাড়লে ডেবিট হয় তাই ক্রয় হিসাব ডেবিট হবে। সারাংশ করলে এখানে ক্রয় হিসাব ডেবিট এবং নগদান হিসাব ক্রেডিট হবে।

সম্পদ , দায় , আয় , ব্যয় ও মালিকানাস্বত্ত্ব সম্পর্কে  বিস্তারিত এখানে । কোনটা কোন হিসাব তা জানতে দেখতে পারেন হিসাব সারণি

আধুনিক পদ্ধতিতে ডেবিট ক্রেডিট উদাহরণ :-

আরো কিছু উদাহণের মাধ্যমে বিষয়টা আরো সহজে বোঝার চেষ্টা করি।

সনাতন পদ্ধতিতে ডেবিট ক্রেডিট নির্ণয়ের নিয়ম

আমরা জানি সনাতন পদ্ধতিতে  হিসাবে মূল ৩ তিনটি ভাগে ভাগ করা যায় । এই ৩ টি হিসাবের উপর ভিত্তি করে ডেবিট-ক্রেডিট নির্ণয় করা যায় । এটিকেই সনাতন পদ্ধতিতে ডেবিট ক্রেডিট নির্ণয় বলে।

মূল বিষয়:- 

     ১. ব্যক্তিবাচক হিসাব: সুবিধা গ্রহণকারী – ডেবিট এবং সুবিধা প্রদানকারী- ক্রেডিট।

     ২. সম্পত্তিবাচক হিসাব: সম্পত্তি আসলে – ডেবিট এবং সম্পত্তি চলে গেলে -ক্রেডিট।

     ৩. নামিক হিসাব : খরচ/ব্যয় বাড়লে-ডেবিট  এবং আয় বাড়লে ক্রেডিট।

সনাতন পদ্ধতিতে হিসাব সম্পর্কে  বিস্তারিত এখানে । কোনটা কোন হিসাব তা জানতে দেখতে পারেন হিসাব সারণি

সনাতন পদ্ধতিতে ডেবিট ক্রেডিট উদাহরণ :-

Leave a Reply