লেনদেনের শ্রেণীবিভাগ
লেনদেনের শ্রেণীবিভাগ

লেনদেন কত প্রকার? লেনদেনের শ্রেণীবিভাগ

লেনদেন কত প্রকার?

বিভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে লেনদেনকে বিভিন্ন ভাবে শ্রেণিবিভাগকরা যায় । নিচে বিভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে লেনদেনের শ্রেণিবিভাগআলোচনা করা হলো।

অর্থ প্রদানের ভিত্তিতে লেনদেন কত প্রকার?

অর্থ প্রদানের ভিত্তিতে লেনদেন ৩ প্রকার ।

                    ১) নগদ লেনদেন।

                    ২) ধারে লেনদেন / বাকি লেনদেন।

                   ৩) অনগদ লেনদেন।

          ১) নগদ লেনদেন: যে লেনদেনে ঘটার সাথে সাথে নগদ টাকা আদান প্রদান করা হয় তাকে নগদ লেনদেন বলে ।  অথবা বলা যেতে পারে যে লেনদেনকে ডেবিট-ক্রেডিট করিলে নগদান অথবা ব্যাংক হিসাব পাওয়া যায় তাকে নগদ লেনদেন বলে। বেতন প্রদান ৪০০০ টাকা এটি একটি নগদ লেনদেন কারন বেতন দেয়ার ফলে নগদ প্রদান হয়েছে । ভিন্নভাবে চিন্তা করলে, বেতন প্রদানকে ডেবিট-ক্রেডিট  করলে দাড়ায় বেতন হিসাব ডে. নগদান হিসাব ক্রে. । এখানে নগদান ক্রেডিট হয়েছে তাই এটি একটি নগদ লেনদেন।  আরো কিছু নগদ লেনদেনের উদাহরণঃ  

  • রহিমের নিকট হতে নগদে  পণ্য ক্রয় ৪০০০ টাকা।
  • পণ্য বিক্রয় ৫০০০ টাকা।
  • করিমকে পরিশোধ ২৯০০ টাকা।
  • দেনাদারের নিকট হতে প্রাপ্তি ৭০০০ টাকা।
  • শিক্ষানবিস সেলামি ৩০০০ টাকা।
  • বকেয়া বেতন প্রদান ৩৫০০ টাকা।

          ২)ধারে লেনদেনঃ যে লেনদেন বাকিতে সংঘটিত হয় অর্থাৎ লেনদেন ঘটার সাথে সাথে নগদ টাকা আদান প্রদান করা হয় না তাকে ধারে লেনদেন বলে ।  অথবা বলা যেতে পারে যে লেনদেনকে ডেবিট-ক্রেডিট করিলে প্রাপ্য অথবা প্রদেয় হিসাব পাওয়া যায় তাকে ধারে লেনদেন বলে।  যেমনঃ বাকিতে পণ্য ক্রয় ২০০০ টাকা। এখানে বাকিতে ক্রয় করা হয়েছে নগদ টাকা প্রদান করা হয় নি তাই এটি একটি ধারে লেনদেন । অন্যভাবে ভাবলে এখানে ক্রয় ডেবিট – প্রদেয় ক্রেডিট । এখানে প্রদেয় হিসাব পাওয়া যায় তাই এটি একটি ধারে লেনদেন । আরো কিছু নগদ লেনদেনের উদাহরণঃ

  • জামালের নিকট পণ্য বিক্রয় ৬০০০ টাকা। [ নাম উল্লেখ থাকলে সাথে নগদ লিখা না থাকলে সেটা বাকিতে ]
  • ধারে পণ্য ক্রয় ৩০০০ টাকা।
  • বিদ্যুৎ বিল পাওয়া গেলো ৯০০ টাকা । [বিলের কাগজ পাওয়া গেছে পরিশোধ করা হয় নি]
  • বেতন বকেয়া রয়েছে ২০০০ টাকা।

          ৩)অনগদ লেনদেনঃ নগদ ও ধারে লেনদেন ছাড়া ভবে আছে যারা তারাই হলো অনগদ লেনদেন । অথবা বলা যেতে পারে যে লেনদেনকে ডেবিট-ক্রেডিট করিলে নগদান-ব্যাংক ও প্রাপ্য অথবা প্রদেয় কোনো  হিসাবই পাওয়া যায় না তাকে অনগদ লেনদেন বলে।যেমনঃ আসবাবপত্রের অবচয় ৫০০ টাকা এখানে নগদান-ব্যাংক ও প্রাপ্য অথবা প্রদেয় কোনো  হিসাবই নেই তাই এটি অনগদ লেনদেন।আরো কিছু অনগদ লেনদেনের উদাহরণঃ

  • যন্ত্রপাতির অবচয় ধার্য ৬০০ টাকা।
  • সুনামের অবলোপন ২০০০ টাকা।
  • বিনামুল্যে পণ্য বিতরণ ৮০০ টাকা।
  • বাট্টা প্রাপ্তি অথবা প্রদান ৩০০ টাকা।
  • রহিমকে ৫০০০ টাকার পূর্ণ নিষ্পত্তিতে ৪৫০০ টাকা প্রদান । [ শুধুমাত্র প্রাপ্ত বাট্টা/ ডিসকাউন্ট ৫০০ টাকা অনগদ লেনদেন বাকি ৪৫০০ টাকা নগদ লেনদেন]
  • জনাব কাশেমের নকিট হতে ৭০০০ টাকার পূর্ণ নিষ্পত্তিতে ৬০০০ টাকা প্রাপ্তি । [ শুধুমাত্র  প্রদত্ত বাট্টা/ ডিসকাউন্ট ১০০০ টাকা অনগদ লেনদেন ]
  • শেয়ারের বিনিময়ে জমি ক্রয় ৫০০০০ টাকা।
**আবার অনগদ লেনদেনকে ২ ভাগে ভাগ করা যায় ।
        i) তাৎপর্যপূর্ণ অনগদ লেনদেন / পুস্তক লেনদেনঃ যে অনগদ লেনদনে সাধারণত প্রতিষ্ঠানে এক হিসাবের সাথে অন্য হিসাব বিনিময় বা সমন্বয় করা হয় তাকে তাৎপর্যপূর্ণ অনগদ লেনদেন / পুস্তক লেনদেন বলে । যেমনঃ জমি ক্রয়ের উদ্দেশ্যে শেয়ার ইস্যু , বন্ডকে শেয়ারে রুপান্তর ইত্যাদি । এর দ্বারা প্রতিষ্ঠানের সার্বিক আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হয় না তাই তাৎপর্যপূর্ণ অনগদ লেনদেনগুলো নগদ প্রবাহ  বিবরণীতে অন্তরভুক্ত হয় না ।
        ii)অন্যান্য অনগদ লেনদেনঃ যে অনগদ লেনদেন দ্বারা তিষ্ঠানের সার্বিক আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হয় তাই হলো অন্যান্য অনগদ লেনদেন।  অন্যান্য অনগদ লেনদেনগুলো নগদ প্রবাহ  বিবরণীতে অন্তরভুক্ত হয় ।

প্রশ্ন: কোনটি নগদ লেনদেনের উদাহরণ?

প্রশ্ন: কোনটি অনগদ লেনদেনের উদাহরণ?

উপযোগিতার ভিত্তিতে লেনদেন কত প্রকার?

উপযোগিতার ভিত্তিতে লেনদেন ২ প্রকার । যথাঃ

               ১) মূলধনজাতীয় লেনদেন ।

               ২)মুনাফাজাতীয় লেনদেন।

         ১) মূলধনজাতীয় লেনদেনঃ যেসকল লেনদেনের সুবিধা দীর্ঘকাল যাবত ভোগ করা যায় তাকে মূলধনজাতীয় লেনদেন বলে। মূলধনজাতীয় লেনদেন সাধারনত অনিয়মিত হয় এবং স্থায়ী সম্পদ , দীর্ঘমেয়াদি দায় ও মূলধন জড়িত থাকে ।কিছু মূলধনজাতীয় লেনদেনের উদাহরণঃ

  • আসবাবপত্র ক্রয় ৩০০০০ টাকা।
  • যন্ত্রপাতি বিক্রয় ২০০০০ টাকা।
  • নিজ অথবা অন্যের বব্যসায়ে বিনিয়োগ ৪০০০ টাকা।
  • শেয়ার ক্রয় অথবা বিক্রয় ৬০০০০ টাকা।
  • ব্যবসায়ের জন্য টিভি , ফ্রিজ  ক্রয় ৮০০০০ টাকা।

          ২)মুনাফাজাতীয় লেনদেনঃ যেসকল লেনদেনের সুবিধা সাধারণত স্বল্পমেয়াদি হয় এবং কমসময়ের জন্যে ভোগ করা যায় তাকে মুনাফাজাতীয় লেনদেন বলে। মুনাফাজাতীয় লেনদেন সাধারনত নিয়মিত হয় এবং আয়-ব্যয় ,চলতি সম্পদ , চলতি দায় ও উত্তোলন জড়িত থাকে ।কিছু মূলধনজাতীয় লেনদেনের উদাহরণঃ

  • নগদে পণ্য ক্রয় ৪০০০ টাকা।
  • ধারে পণ্য বিক্রয় ৫০০০ টাকা।
  • ব্যবসায় হতে উত্তোলন ২০০০০ টাকা।
  • বেতন প্রদান ৩৪৯৯ টাকা।
  • কমিশন প্রাপ্তি ৫০০ টাকা।

প্রশ্ন: কোনটি মূলধনজাতীয় লেনদেনের উদাহরণ?

প্রশ্ন: কোনটি মুনাফাজাতীয় লেনদেনের উদাহরণ?

প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্কের ভিত্তিতে লেনদেন কত প্রকার?

প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্কের ভিত্তিতে লেনদেন ২ প্রকার। যথাঃ

               ১)আন্তঃলেনদেন।

              ২)বহিঃলেনদেন।

          ১)আন্তঃলেনদেনঃ যে সকল লেনদেনে কোনাে তৃতীয় পক্ষ জড়িত থাকে না , প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নীতি ও সিদ্ধান্তের কারনে সৃষ্টি হয় তাকে আন্তঃলেনদেন বলে। আন্তঃলেনদেনে সাধারণত দায়, আয় ও ব্যয় হিসাব জড়িত থাকে না। দায়, আয় ও ব্যয় হিসাব থাকলে তা  বহিঃলেনদেন বলে বিবেচিত হবে। কিছু আন্তঃলেনদেনের উদাহরণঃ

  • স্থায়ী সম্পত্তির অবচয় ৪০০ টাকা।
  • সুনামের অবোলোপন ৩০০ টাকা।
  • সাধারণ সঞ্চিতি ৫০০০ টাকা বৃদ্ধি করা হলো।
  • প্রধান ক্যাশিয়ার কতৃক খুচরা ক্যাশিয়ারকে প্রদান ৪০০০ টাকা।

          ২)বহিঃলেনদেনঃ যে সকল লেনদেনে কোনাে তৃতীয় পক্ষ জড়িত থাকে  তাকে বহিঃলেনদেন বলে।কোনো লেনদেনে দায়, আয় ও ব্যয় হিসাব থাকলে তা  বহিঃলেনদেন বলে বিবেচিত হবে। কিছু বহিঃলেনদেনের উদাহরণঃ

  • পণ্য ক্রয় ১০০০০ টাকা।
  • মেশিন ক্রয় ৪০০০০০ টাকা।
  • ব্যাংক হতে ঋণ গ্রহণ ৪০৫০০ টাকা।
  • দেনাদারের নিকট হতে প্রাপ্তি ৫০০০ টাকা।
  • পাওনাদারকে পরিশোধ ৪০০০ টাকা।

প্রশ্ন: কোনটি আন্তঃলেনদেনের উদাহরণ?

প্রশ্ন: কোনটি বহিঃলেনদেনের উদাহরণ?

দৃশ্যমানতার ভিত্তিতে লেনদেন কত প্রকার?

দৃশ্যমানতার ভিত্তিতে লেনদেন ২ প্রকার।যথাঃ

               ১)দৃশ্যমান লেনদেন।

               ১)অদৃশ্যমান লেনদেন।

          ১)দৃশ্যমান লেনদেনঃ যে সকল লেনদেনের প্রভাব বা ফলাফল চোখে দেখা যায় তাকে দৃশ্যমান লেনদেন বলে। কিছু দৃশ্যমান লেনদেনের উদাহরণঃ

  • পণ্য ক্রয় ১০০০০ টাকা।
  • মেশিন ক্রয় ৪০০০০০ টাকা।
  • ব্যাংক হতে ঋণ গ্রহণ ৪০৫০০ টাকা।
  • দেনাদারের নিকট হতে প্রাপ্তি ৫০০০ টাকা।
  • পাওনাদারকে পরিশোধ ৪০০০ টাকা।

          ১)অদৃশ্যমান লেনদেনঃ যে সকল লেনদেনের প্রভাব বা ফলাফল চোখে দেখা যায় না তাকে অদৃশ্যমান লেনদেন বলে। কিছু অদৃশ্যমান লেনদেনের উদাহরণঃ

  • স্থায়ী সম্পত্তির অবচয় ৪০০ টাকা।
  • সুনামের অবোলোপন ৩০০ টাকা।
  • প্রাথমিক খরচের অবোলোপন ৪০০ টাকা।

প্রশ্ন: কোনটি দৃশ্যমান লেনদেনের উদাহরণ?

প্রশ্ন: কোনটি অদৃশ্যমান লেনদেনের উদাহরণ?

উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে লেনদেন কত প্রকার?

উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে লেনদেন ৩ প্রকার।যথাঃ

               ১)কারবারি/ ব্যবসায়িক লেনদেন।

               ২)অকারবারি/ অব্যবসায়িক লেনদেন।

               ৩)ব্যক্তিগত লেনদেন।

          ১)কারবারি/ ব্যবসায়িক লেনদেনঃ মুনাফা অর্জনের ‍উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠানে যেসকল লেনদেন  সংঘটিত হয় তাকে কারবারি/ ব্যবসায়িক লেনদেন বলে। কিছু কারবারি/ ব্যবসায়িক লেনদেনের উদাহরণঃ

  • পণ্য ক্রয় ৪০০০ টাকা।
  • পণ্য বিক্রয় ৩০০০ টাকা ।
  • বেতন প্রদান ২০০০ টাকা।

          ১)অকারবারি/ অব্যবসায়িক লেনদেনঃ যে সকল লেনদেনের উদ্দেশ্য মুনাফা অর্জন নয় ঐ সকল লেনদেনকে অকারবারি বা অবব্যসায়িক লেনদেন বলে। যেমনঃ

  •  মাদ্রাসায় দান ৪০০০ টাকা।
  • কর্মীদের ফুটবল খেলার আয়োজন বাবদ খরচ ৪০০ টাকা।
  • অনুদান ৩০০০ টাকা।

         ৩)ব্যক্তিগত লেনদেনঃ মানুষ ব্যক্তিগত জীবনে যে সকল লেনদেন সম্পাদন করে তাকে ব্যাক্তিগত লেনদেন বলে। যেমনঃ

  • ছেলের স্কুলের বেতন প্রদান ৪০০ টাকা।
  • মেয়ের বিয়ের উদ্দেশ্যে গহণা ক্রয় ৫০০০০ টাকা।

প্রশ্ন: কোনটি কারবারি/ ব্যবসায়িক লেনদেনের উদাহরণ?

প্রশ্ন: কোনটি অকারবারি/ অব্যবসায়িক লেনদেনের উদাহরণ?

Leave a Reply