লেনদেন কি ? কাকে বলে ? বৈশিষ্ট? প্রকারভেদ?

লেনদেন কি ? কাকে বলে ? বৈশিষ্ট? প্রকারভেদ?

লেনদেন কি?

লেনদেন হলো হিসাববিজ্ঞানে মূল বা মৌলিক উপাদান। লেনদেন শব্দটির আভিধানিক অর্থ গ্রহণ ও দান বা আদান ও প্রদান বা নেওয়া ও দেওয়া  । এর ইংরেজী প্রতিশব্দ  হলো “Transaction”   । সাধারণ অর্থে কোনো কিছু দেওয়া বা নেওয়াই হলো লেনদেন। হিসাববিজ্ঞানের ভাষায় লেনদেন কাকে বলে তা বুঝতে হলে আমাদের লেনদেনের উৎস সম্পর্কে জানতে হবে।

লেনদেনের উৎস কি? / লেনদেনের উৎপত্তি ।

লেনদেনের উৎস হলো ঘটনা। কোনো কিছু ঘটাই হলো ঘটনা । যেমনঃ রনি স্কুলে গেল , সাকিবের মামা মারা গিয়েছে , পণ্য ক্রয় ১০০০০ টাকা এগুলো সবগুলোই ঘটনা । আর এসব ঘটনা থেকে লেনদেন সৃষ্টি হয়। তবে সব ঘটনা থেকে লেনদেন সৃষ্টি হয় না । ঘটনাকে আমরা ২ ভাগে ভাগ করতে পারি :

           ১) আর্থিক ঘটনাঃ যে সকল ঘটনার সাথে অর্থ জড়িত সেগুলোই আর্থিক ঘটনা। যেমনঃ বেতন প্রদান ৪০০০ টাকা।

           ২)অনার্থিক ঘটনাঃ যে সকল ঘটনার সাথে অর্থ জড়িত থাকেনা সেগুলোই অনার্থিক ঘটনা। যেমনঃ ম্যানাজারের মৃত্যু।

এই দুই প্রকার ঘটনা থেকে শুধু আর্থিক ঘটনা থেকেই লেনদেনের সৃষ্টি হয়। যে সকল ঘটনা ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটায় সেগুলোই লেনদেন। অর্থাৎ সকল লেনদেনই ঘটনা কিন্তু সকল ঘটনা লেনদেন নয়।

লেনদেন কাকে বলে?

অর্থের মাপকাঠিতে পরিমাপযোগ্য কোনো ঘটনার মাধ্যমে  কারবার/ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটলে  ঐ ঘটনাকে লেনদেন বলে।

অর্থাৎ আমরা বলতে পারি যে ঘটনা কারবারের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন করে তাই লেনদেন । প্রত্যেক লেনদেনে একাধিক পক্ষ জড়িত থাকে যেখানে এক পক্ষ সুবিধা প্রদান করে এবং অপর পক্ষ সুবিধা গ্রহণ করে।  যেমনঃ অফিসের বেতন প্রদান ৫০০০ টাকা।  এখানে বেতন দেওয়ার ফলে ব্যবসায়ের নগদ টাকা কমেছে মানে আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে , এক পক্ষ বেতন প্রদান করেছে আরেক পক্ষ গ্রহণ করেছে তাই এটি একটি লেনদেন।

লেনদেনকে আরো ভালোভাবে বুঝতে আমাদের এর বৈশিষ্ট সম্পর্কে জানতে হবে।

লেনদেনের বৈশিষ্ট্য

সবকিছুর মতো লেনদেনেরও স্বতন্ত্র কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যার ভিত্তিতে আমরা লেনদেন সনাক্ত করতে পারি। নিম্নে লেনদেনের বৈশিষ্ট্যসমূহ  আলোচনা করা হলো।

          (১)আর্থিক অবস্থার পরিবর্তনঃ লেনদেন অবশ্যই প্রতিস্থানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন সাধিত করবে । আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন না হলে তা লেনদেন বলে বিবেচিত হবে না। যেমনঃ নগদ ৭০০০ টাকা দিয়ে আসবাবপত্র ক্রয় করা হলো। এখানে প্রতিস্থানে সম্পদ (আসবাবপত্র) বৃদ্ধি এবং নগদ টাকা হ্রাস পেয়েছে । অর্থাৎ আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে তাই এটি একটি লেনদেন। কিন্তু ৭০০০ টাকার আসবাবপত্র ক্রয়ের ফরমায়েশ প্রদান করলে তা লেনদেন হবে  না কারণ এখানে ফরমায়েশ ( অর্ডার ) দেওয়া হয়েছে এতে আর্থিক অবস্থার কোন পরিবর্তন হয় নি। আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন দুই ভাবে হতে পারে–

               ক. পরিমাণগত বা নিট পরিবর্তনঃ যখন কোনো লেনদেন হিসাব সমীকরণ ( সম্পদ=দায়+মালিকানাস্বত্ত্ব ) এর সমান(=) এর ‍উভয় পাশে পরিবর্তন ঘটায় তখন তাকে পরিমাণগত বা নিট পরিবর্তন বলে। যেমনঃ  ধারে আসবাবপত্র ক্রয় ৪০০০ টাকা । এখানে ধারে আসবাবপত্র ক্রয়ের ফলে আসবাবপত্র  (সম্পদ) বৃদ্ধি এবং প্রদেয় (দায়) বৃদ্ধি পেয়েছে । অর্থাৎ সমান(=) এর ‍উভয় পাশে পরিবর্তন ঘটেছে।

               খ. কাঠামোগত বা গুনগত পরিবর্তনঃ যখন কোনো লেনদেন হিসাব সমীকরণ ( সম্পদ=দায়+মালিকানাস্বত্ত্ব ) এর সমান(=) এর ‍শুধু মাত্র এক পাশে পরিবর্তন ঘটায় তখন তাকে কাঠামোগত বা গুনগত পরিবর্তন বলে।যেমনঃ নগদে আসবাবপত্র ক্রয় ৪০০০ টাকা । এখানে নগদে আসবাবপত্র ক্রয়ের ফলে আসবাবপত্র  (সম্পদ) বৃদ্ধি এবং নগদ টাকা (সম্পদ) হ্রাস  পেয়েছে । অর্থাৎ সমান(=) এর এক পাশে পরিবর্তন ঘটেছে।

          (২)অর্থের মাপকাঠিতে পরিমাপযোগ্যঃ লেনদেন অবশ্যই অর্থের মাপকাঠিতে পরিমাপযোগ্য হবে। কোন ঘটনা অর্থের দ্বারা পরিমাপ করা না গেলে তা লেনদেন বিবেচিত হবে না। যেমনঃ ম্যনেজারের বেতন দেওয়া হলো ১২০০০ টাকা। এটি একটি লেনদেন কারণ এটি  পরিমাপযোগ্য । কিন্তুু ম্যনেজার মৃত্যুবরণ করলো এটি লেনদেন নয় কারণ এটি অর্থের দ্বারা পরিমাপযোগ্য নয়।

          (৩)দ্বৈতসত্তা বা দুটি পক্ষঃ দুটি পক্ষ ব্যতীত লেনদেন হয় না , লেনদেরে এই বৈশিষ্ট্যকে দ্বৈতসত্তা বলে।  প্রতিটি লেনদেনে অবশ্যই দুটি পক্ষ থাকবে। এক পক্ষ গ্রহণ ও অপর পক্ষ প্রদান করবে। যেমনঃ নগদে পণ্য ক্রয় ৫০০০০ টাকা এখানে দুটি পক্ষ জড়িত একটি পণ্য ক্রয় অপরটি নগদ টাকা।

          (৪) স্বয়ংসম্পূর্ণতা ও স্বতন্ত্রতা: প্রতিটি লেনদেন স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং অন্য লেনদেন থেকে আলাদা ও স্বতন্ত্র । দুটি লেনদেনের মধ্যে কোন সম্পর্ক বিদ্যমান থাকলেও দুটিকে এক ধরা যাবে না। যেমন: বাকিতে ক্রয় করা হলো ৪০০০ টাকা , ১০ দিন পর প্রদেয় ৪০০০ টাকা পরিশোধ করা হলো । এখানে দুটি লেনদেনের মধ্যে সম্পর্ক  বিদ্যমান থাকলেও এরা স্বয়ংসম্পূর্ণ ও স্বতন্ত্র।

          (৫) লেনদেনের দৃশ্যমানতা: লেনদেন দৃশ্যমান অদৃশ্যমান উভয়ই হতে পারে ।আসবাবপত্র ক্রয় ২০০০ টাকা এটি একটি দৃশ্যমান লেনদেন কারণ এটি দেখা যায় । অপরদিকে আসবাবপত্রের অবচয ৫০০ টাকা  এটি একটি অদৃশ্যমান লেনদেন কারণ এটি দেখা যায় না । এখানে অবচয় বলতে আসবাবপত্র ব্যবহারের ফলে মূল্য হ্রাস বোঝানো হয়েছে । মূল্য হ্রাসের ফলে ব্যবসায়ের ক্ষতি হয়েছে এবং এটি দৃশ্যমান নয় তাই এটি অদৃশ্যমান লেনদেন।

          (৬) ঐতিহাসিক ঘটনাঃ যেসব আর্থিক ঘটনা ইতঃপূর্বে ঘটে গেছে তাকে ঐতিহাসিক ঘটনা বলে । ঐতিহাসিক ঘটনা লেনদেন হতে পারে । আবার কিছু ঘটনা যা ভবিষ্যতে ঘটতে পারে এমন ঘটনাও লেনদেন হতে পারে । যেমনঃ অনাদায়ি বাট্টা সঞ্চিতি , বাট্টা সঞ্চিতি।

পরিশেষে বলা যায় একটি ঘটনাকে লেনদেন হতে হলে অবশ্যই  উপরের বৈশিষ্টগুলো বিদ্যমান থাকতে হবে।

লেনদেনের শ্রেণিবিভাগ

বিভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে লেনদেনকে বিভিন্ন ভাবে শ্রেণিবিভাগকরা যায়। বিস্তারিত জানতে নিচের পোষ্ট।

লেনদেনের শ্রেণীবিভাগ
লেনদেন কত প্রকার? লেনদেনের শ্রেণীবিভাগ

Let's Do Some MCQ

লেনদেনের আভিধানিক অর্থ কী?

কোন ধরণের ঘটনা থেকে লেনদেন সৃষ্টি হয়?

নিচের কোনটি লেনদেন নয়?

কোনটি একটি অনার্থিক ঘটনা?

কোন ধরনের লেনদেন দৃশ্যমান লেনদেন হিসাবে বিবেচিত হয়?

Share with your friends and family

This Post Has One Comment

  1. Jessica Traversie

    I am sure this piece of writing has touched all the internet people, its really really good piece of
    writing on building up new weblog.

Leave a Reply