হিসাবের ধারণা
হিসাব কি?
হিসাব যার ইংরেজী প্রতিশব্দ Accounts . একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের লেনদেন সংঘটিত হয়। আর এসব লেনদেন থেকেই একটি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা অর্থাৎ আয়-ব্যয় , সম্পদ , দায় ও মালিকাস্বত্ত্বের পরিমাণ জানা যায় । কিন্তু প্রত্যেক লেনদেনকে একক ভাবে হিসাবভুক্ত করা খুবই জটিল ও সময়সাপেক্ষ কাজ । তাই ব্যবসায়ের এসকল তথ্য জানতে সমজাতীয় লেনদেন সমূহকে একটি নিদিষ্ট নামে বা শিরোনামে হিসাবভুক্ত করা হয়। যেমন: সকল বিক্রয়কে বিক্রয় হিসাব শিরোনামে হিসাবভুক্ত করা । সকল নগদ টাকা আগমন নির্গমনকে নগদান হিসাব শিরোনামে লিপিবদ্ধ করা ইত্যাদি। অতএব, আমরা বলতে পারি সমজাতীয় লেনদেনগুলোকে একটি নির্দিষ্ট শিরোনমে লিখে যে বিবরণী প্রস্তুত করা হয় তাই হলো হিসাব।
হিসাব কাকে বলে?
কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সম্পদ ,দায়,আয় , ব্যয়সংক্রান্ত লেনদেন সমূহ হিসাববিজ্ঞানের নিয়মানুযায়ী যথাযথ শিরোনামে সংক্ষিপ্ত ও শ্রেণীবদ্ধভাবে সাজানোকেই হিসাব বলে।
Pro. R.N. Carter এর মতে “Accounts is a ledger record in a sumnerised form of all the transactions that have taken place with the particular person or things specified.” অর্থাৎ কোন ব্যক্তি বা বস্তু সংক্রান্ত বিষয়ে সংঘটিত লেনদেনসমূহের সংরক্ষিত সংক্ষিপ্ত খতিয়ানকে হিসাব বলে।
হিসাবের শ্রেণিবিভাগ
ব্যাবসায় প্রতিষ্ঠানে সংঘটিত বিভিন্ন লেনদেনকে সঠিকভাবে হিসাবভুক্ত করার জন্য হিসাবের শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কে ধারণা থাকা আবশ্যক। হিসাবের শ্রেণিবিভাগ করার দুটি পদ্ধতি রয়েছে । যথা:
১) সনাতন পদ্ধতি।
২) আধুনিক পদ্ধতি বা সমীকরণ পদ্ধতি।
হিসাব কত প্রকার ও কি কি?
আধুনিক পদ্ধতিতে হিসাব ৫ প্রকার। যথা: সম্পদ , দায় , মালিকানাস্তত্ত্ব , আয় ও ব্যয়।
আবার,
সনাতন পদ্ধতিতে হিসাব প্রধানত ২ প্রকার। যথা: ব্যক্তিবাচক হিসাব ও অব্যক্তিবাচক হিসাব। অব্যক্তিবাচক হিসাব আবার ২ প্রকার যথা: সম্পত্তিবাচক হিসাবব ও নামিক হিসাব।
নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
আধুনিক পদ্ধতিতে হিসাব কত প্রকার ও কি কি?
আধুনিক পদ্ধতিতে হিসাব ৫ প্রকার। যথা: সম্পদ , দায় , মালিকানাস্তত্ত্ব , আয় ও ব্যয়। আধুনিক পদ্ধতিকে সমীকরণ পদ্ধতিও বলা হয় । অর্থাৎ
সমীকরণ পদ্ধতিতে হিসাব কত প্রকার?
সমীকরণ বা আধুনিক পদ্ধতিতে হিসাব ৫ প্রকার। (Modern /Equation Method)
১)সম্পদ হিসাব। (Assets account)
২)দায় হিসাব। (Liabilities account)
৩) মালিকানাস্বত্ত্ব হিসাব। (Owner’s equity / propreitorship)
৪) আয় হিসাব। ( Revenue account)
৫) ব্যয় হিসাব। ( Expense account)
১) সম্পদ হিসাব : যে সকল উপাদান প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে সুবিধা ভোগ করে তাই সম্পদ। যে হিসাবে প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় সম্পদের হ্রাস-বৃদ্ধি সক্রান্ত লেনদেনসমূহ লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে সম্পদ হিসাব বলে । যেমন: নগদান , ব্যাংক , আসবাবপত্র , দালানকোঠা , জমি ইত্যাদি।
সম্পদ হিসাব চেনার উপায়-
ক) প্রতিষ্ঠানের ব্যবহারকৃত উপাদান: যে সকল উপাদান ব্যবসায়ে ব্যবহার করা হয় কিন্তু তা বিক্রয় করা হয় না সেসকল উপদান হলো সম্পদ । যেমন : চেয়ার , টেববিল , কম্পিউটার , অফিস সরন্জাম , অফিস সাপ্লাইজ ইত্যাদি। লক্ষনীয়: চেয়ার টেবিল ইত্যাদি বিক্রয় করার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠানে থাকলে সেটা সম্পদ না শুধু মাত্র ব্যবহারের উদ্দেশ্য হলেই তা সম্পদ বলে বিবেচিত হবে।
খ) যাবতীয় জমা জিনিস: জমা থাকা যেকোনো জিনিস সম্পদ বলে বিবেচিত হয়। যেমন: নগদ , ব্যাংক (টাকা জমা আছে) । মজুদ পণ্য (পণ্য জমা আছে) । বিনিয়োগ ( অন্যের নিকট টাকা জমা আছে) । অব্যহৃত মনিহরি ( মনিহরি জমা আছে)।
গ) যাবতীয় পাওনা: সকল প্রকার অগ্রিম খরচ ও বকেয়া আয় সম্পদ বলে বিবেচিত হয়। যেমন: দেনাদার একটি সম্পদ কারন আমরা দেনাদারের কাছে টাকা পাওনা থাকি যা ভবিষৎতে পাবো । অগ্রিম ভাড়া একটি সম্পদ কারন আমরা টাকা দিয়ে দিয়েছি কিন্তু সুবিধা ভোগ করিনি । অর্থাৎ সুবিধা পাওনা আছি তাই এটি সম্পদ। এরকম আরো কিছু সম্পদ হলো: প্রাপ্য হিসাব , প্রাপ্য বিল , অগ্রিম বেতন , অগ্রিম মুজুরি ইত্যাদি।
ঘ) প্রতিষ্ঠানের সুনাম ও আইনি দলিল: সুনাম , ট্রেড লাইসেন্স , ট্রেডমার্ক, পেটেন্ট , কপিরাইট ইত্যাদি সম্পদ বলে বিবেচিত।
সম্পদের আরো উদাহরণ জানতে আমাদের হিসাব সারণিতে সম্পদ লিখে সার্চ দিন।
২)দায় হিসাব: প্রতিষ্ঠানে তৃতীয় পক্ষের অধিকার হলো দায়। কোন লেনদেন দ্বারা প্রতিষ্ঠানের দায়ের পরিমান হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটলে তা যে হিসাবে লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে দায় হিসাব বলে। যেমন: ঋণ , পাওনাদার , বকেয়া বেতন ,ব্যাংক জমাতিরিক্ত ইত্যাদি।
দায় হিসাব চেনার উপায়-
ক) যাবতীয় ধার/দেনা : যেকোনো প্রকার ধার দেনা দায় বলে বিবেচিত হয়। যেমন: পাওনাদার ,প্রদেয় হিসাব, প্রদেয় বিল, ব্যাংক ঋণ।
খ) বকেয়া খরচ/ব্যয়: যেকোনো বকেয়া খরচ দায় হিসাব। যেমন: বকেয়া বেতন , বকেয়া মুজুরি , বকেয়া বিদ্যুৎ বিল ইত্যাদি।
গ) অগ্রিম আয়: সকল অগ্রিম আয় অর্থ্যাৎ টাকা নিয়ে পণ্য/সেবা/সুবিধা দেওয়া হয় নি এমন সব দায় হিসাব। যেমন: অনুপার্জিত সেবা আয়, অগ্রিম উপভাড়া।
দায়ের আরো উদাহরণ জানতে আমাদের হিসাব সারণিতে দায় লিখে সার্চ দিন।
৩) মালিকানাস্বত্ত্ব হিসাব: প্রতিষ্ঠানে মালিক পক্ষের অধিকারই হলো মালিকানাস্বত্ত্ব। কোন লেনদেন দ্বারা প্রতিষ্ঠানের মালিকানাস্বত্ত্বের পরিমান হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটলে তা যে হিসাবে লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে মালিকানাস্বত্ত্ব হিসাব বলে। যেমন: মূলধন, উত্তোলন ,আয়কর , জীবন বিমা প্রিমিয়াম।
মালিকানাস্বত্ত্ব হিসাব চেনার উপায়-
ক) মলিকের আদান-প্রদান: মালিক ব্যবসায়ে কিছু দিলে মূলধন এবং ব্যবসা ধেকে কিছু নিলে উত্তোলন । মুলধন ও উত্তোলন দুটিই মালিকানাস্বত্ত্ব হিসাব। যেমন: ব্যবায়ে মালিক টাকা বা সম্পদ বিনিয়োগ করলে তা মূলধন বা মালিকানাস্ব্ত্ত্ব । আমার মালিক নিজ প্রয়োজনে টাকা উত্তোলন করলে সেটাও মালিকানাস্বত্তব।
মালিকানাস্বত্ত্ব হিসাবের আরো উদাহরণ জানতে আমাদের হিসাব সারণিতে মালিকানাস্বত্ত্ব লিখে সার্চ দিন।
৪) আয় হিসাব: যে সকল দফার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের আয় প্রকাশ পায় তাকে আয় হিসাব বলে। যেমন: বিক্রয় , কমিশন প্রাপ্তি , বিনিয়োগের সুদ ,উত্তোলনের সুদ ,উপভাড়া।
আয় হিসাবের আরো উদাহরণ জানতে আমাদের হিসাব সারণিতে আয় লিখে সার্চ দিন।
৫) ব্যয় হিসাব: যে সকল দফার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের ব্যয় প্রকাশ পায় তাকে ব্যয় হিসাব বলে। যেমন: বেতন, ভাড়া, মুজুরি, শুল্ক , মূলধনের সুদ, ঋণের সুদ।
ব্যয় হিসাবের আরো উদাহরণ জানতে আমাদের হিসাব সারণিতে ব্যয় লিখে সার্চ দিন।
সনাতন পদ্ধতিতে হিসাব কত প্রকার ও কি কি?
সনাতন পদ্ধতিতে হিসাব প্রধানত ২ প্রকার। (Traditional Method)
১) ব্যক্তিবাচক হিসাব । (Personal Account)
২) অ-ব্যক্তিবাচক হিসাব। ( Non-personal account)
আবার, অ-ব্যক্তিবাচক হিসাব ২ প্রকার।
ক) সম্পত্তিবাচক হিসাব।(Property account)
খ) নামিক হিসাব। ( Nominal account)
নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলে।
১) ব্যক্তিবাচক হিসাব: ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সক্রান্ত হিসাবকে ব্যক্তিবাচক হিসাব বলে।যেমন: রহিম হিসাব , করিম হিসাব , রুপা এন্ড সন্স হিসাব । ব্যাক্তিবাচক হিসাব আবার ২ প্রকারের –
ক) দেনাদার হিসাব (Debtors): কোন ব্যক্তিবচক হিসাব দ্বারা যদি এমন বোঝায় যে প্রতিষ্ঠান ঐ ব্যক্তির কাছে পাওনা আছে তবে তাকে দেনাদার হিসাব বলে। যেমন: রহিমের নেকট ধারে বিক্রয় ৩০০০ টাকা এখানে রহিম দেনাদার।
খ) পাওনাদার হিসাব (Creditors): কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিকট টাকা পাওনা হলে ঐ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত হিসাবকে পাওনাদার হিসাব বলে। যেমন: জামালের নিকট হতে ধারে ক্রয় ৪০০০ টাকা এখানে জামাল হিসাব হলো পাওনাদার।
ব্যক্তিবাচক হিসাবের আরো উদাহরণ জানতে আমাদের হিসাব সারণিতে ব্যক্তিবাচক লিখে সার্চ দিন।
২) অ-ব্যক্তিবাচক হিসাব: যে হিসাবের সাথে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান জড়িত নয় বরং সম্পদ ও আয়-ব্যয় অন্তর্ভুক্ত হয় তাকে অ-ব্যক্তিবাচক হিসাব বলে।এই হিসাবকে ২ ভাগে ভাগ করা যায় —
ক) বাস্তব / সম্পত্তিবাচক হিসাব: কোন বস্তু বা সম্পদ হ্রাস-বৃদ্ধি হলে যে হিসাবে লিখা হয় তাকে সম্পত্তিবাচক হিসাব বলে। যেমন: আসবাবপত্র , দালানকোঠা , জমি ইত্যাদি।
সম্পত্তিবাচক হিসাবের আরো উদাহরণ জানতে আমাদের হিসাব সারণিতে সম্পত্তিবাচক লিখে সার্চ দিন।
খ) আয়-ব্যয়বাচক/ নামিক হিসাব: লাভ-লস সক্রান্ত লেনদেন যে হিসাবে লিখা হয় তাকে নামিক হিসাব বলে। সকল প্রকার আয় ব্যয় এই হিসাবে লিপিবদ্ধ হয়। যেমন: ক্রয়, বিক্রয়, বেতন , ভাড়া, উপভাড়া ।নামিক হিসাবকে ২ ভাগে ভাগ করা যেতে পারে–
i)আয় সক্রান্ত: সকল প্রকার আয়।
ii) ব্যয় সক্রান্ত : সকল প্রকার ব্যয়।
নামিক হিসাবের আরো উদাহরণ জানতে আমাদের হিসাব সারণিতে নামিক লিখে সার্চ দিন।